You dont have javascript enabled! Please enable it!

নিউইয়র্ক টাইমস, মঙ্গলবার, ২৯ জুন, ১৯৭১
“অন্যান্য জাতি কতৃক আহ্বান জানানো সত্ত্বেও মার্কিন সরকার পাকিস্তানে সাহায্যদান অব্যাহত রাখবে”
টেড শ্যুল (নিউইয়র্ক টাইমসের বিশেষ বার্তা)

ওয়াশিংটন, জুন ২৮ – নিক্সন প্রশাসন আজ পুনর্ব্যক্ত করেন, বিদেশী সহায়তা বন্ধে আন্তর্জাতিক চাপ থাকা সত্ত্বেও যতদিন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় না পৌঁছাবে ততদিন পাকিস্তানে অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদান করা হবে।

এগারোটি জাতি নিয়ে গঠিত পাকিস্তান সাহায্য সংঘের অধিকাংশই মনে করেন সহায়তা (যা প্রায় বছরে ৫00 মিলিয়ন ডলার) বন্ধ করলে যে সংকটের কারণে আনুমানিক ২০০,০০০ পূর্ব পাকিস্তানিদের মৃত্যু হয় এবং প্রায় ছয় মিলিয়ন উদ্বাস্তু ভারতে পালিয়ে যায় সেই সংকটের একটা রাজনৈতিক সুরাহা হবে।

পাকিস্তানকে সহায়তায় সমন্বয়কারী বিশ্বব্যাংক পরবর্তি সাহায্যের বিরুদ্ধে সুপারিশ করেছে। সংঘের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ব্রিটেন. কানাডা এবং বেলজিয়াম অনুরূপ অবস্থান নিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের পাকিস্তান সফরের প্রতিবেদন গ্রহন করার জন্য গত সোমবারে প্যারিসে সহয়তা সংঘের এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, সেখানেই তাদের অবস্থান পরিষ্কার হয়। গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট এস ম্যাকান্মারাকে এই নীতি অনুমোদন করতে বলা হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্র প্যারিসে যা বলেছিল, প্রশাসনের কর্মকর্তারা আজ সিনেট শুনানিতে সেটা জানিয়েছেন, আর সেটা হলো একটি রাজনৈতিক চাপের হাতিয়ার হিসেবে পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক সাহায্যের নীতিতে যুক্তরাষ্ট্র অসমর্থন জানিয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি আজ এখানে পুনর্ব্যক্ত হলো।

সিনেট বিচারপতিগণের উপকমিটির সামনে উদ্বাস্তুদের ব্যাপারে আজ সাক্ষ্য দেওয়ার সময়, পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপসহকারী রাষ্ট্রসচিব ক্রিস্টোফার ভ্যান হোলেন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কতৃক পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক সাহয়তা প্রদানের উদ্দেশ্য হলো স্বায়ত্তশাসনের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে “রাজনৈতিক সমঝোতা” তৈরি করা এবং শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন করার মত পরিবেশ সৃষ্টি করা।

যাহোক, চুক্তিতে স্বীকার করা হয়েছে, এধরনের উদ্দেশ্য তখন পর্যন্ত পরিমাপযোগ্য ছিল না এবং কিছু শরনার্থী দেশে ফিরে এসেছে।

এছাড়াও মিঃ ভ্যান হোলেন ঘোষণা করেন যে, পাকিস্তানে সামরিক সরঞ্জাম চালানে একটি পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা স্থাপনের ব্যাপারে প্রশাসনের কোন পরিকল্পনা ছিল না।

ম্যাসাচুসেটস ডেমোক্র্যাট সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির নেতৃত্বে তিনি উপকমিটিকে বলেন যে, ” পাকিস্তানে সম্ভবত অতিরিক্ত সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো হবে”

তিনি বুঝিয়ে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধবিগ্রহ প্রাদুর্ভাবের পর গত ২৪শে মার্চ প্রশাসন তার চার বছর মেয়াদী ঋণ ও নগদ বিক্রয় কর্মসূচির আওতাধীন সামরিক সরঞ্জামের রপ্তানি লাইসেন্স মঞ্জুর স্থগিত করেছিল, সেই তারিখের আগে দেওয়া অনুমতি প্রত্যাহার করা হবে না।

যাহোক, অন্যান্য প্রশাসন সূত্র প্রতিবেদন করেছিল, রাষ্ট্রবিভাগ সকল চালানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা সত্ত্বেও কমপক্ষে তিনটি পাকিস্তানী জাহাজে নিউইয়র্ক থেকে করাচীতে সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়ার ঘটনা খবরের কাগজ প্রকাশ হাওয়ার পর গত সপ্তাহে এই সিদ্ধান্ত জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ কতৃক প্রণীত হয়।

কেনেডি প্রতিবাদ

পরবর্তীতে রাষ্ট্রবিভাগ একটি সংশোধন জারি করে জানায়, মার্চের পূর্বে পাকিস্তান কতৃক ক্রয়কৃত সরঞ্জাম চালানের উপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। সিনেটর কেনেডির জিজ্ঞাসাবাদে মিঃ ভ্যান হোলেন স্বীকার করেন যে, এবিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের পূর্বের প্রকাশ্য বিবৃতি “গোলমেলে” এবং “বিভ্রান্তিকর”।

দিনের শেষে, রাষ্ট্রবিভাগের কর্মকর্তারা প্রতিবেদনে নিশ্চিত করেন, আজ নিউইয়র্কে থাকা পাকিস্তানি জাহাজ কাপ্তাই ২রা জুলাই করাচীর উদ্দেশ্যে গমন করবে, “সম্ভবত যুদ্ধোপকরণ নিয়ন্ত্রণ তালিকায় থাকা সরঞ্জাম সঙ্গে নিয়ে”, এবং অন্য চার-পাঁচটা জাহাজ অনুরূপ পন্য নিয়ে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি রওনা হবে।

শেষ বিকেলের দিকে এই তথ্য সিনেটর কেনেডিকে নতুন চালানের প্রতিবাদে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ জে সিস্কোকে টেলিফোন করতে প্ররোচিত করে।

তারপর এক বিবৃতিতে জনাব কেনেডি অভিযোগ করেন, আজ সকালে তার উপকমিটির সামনে শুনানিতে পাকিস্তানে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের নীতি “বিভ্রান্তিকর এবং পরস্পরবিরোধী” হিসাবে ইঙ্গিত করা হয়।

তিনি বলেন, “আমার এবং কংগ্রেসের অন্যদের মধ্যকার বোঝাপড়া অমান্য করতে, আমাদের সরকার অবাধে পাকিস্তানে গত দুই মাস ধরে অন্ততপক্ষে তিনটি সামরিক সরঞ্জাম চালান সহ্য করেছে”।

“আজ, শুনানির পর, আমরা জানতে পারি যে, এখনো কাপ্তাই নামে অন্য একটি জাহাজ পাকিস্তানের জন্য অধিক সামরিক দ্রব্যাদি দিয়ে বোঝাই হওয়ার জন্য নিউইয়র্কে ভিড়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে আগামী সপ্তাহের মধ্যে আরো চার-পাঁচটা জাহাজ সেখানে বোঝাই হবে।

“আমি প্রশাসনকে পাকিস্তানে অস্ত্র পাঠানো নীতি বন্ধ করতে বলেছি”।

উপকমিটির শুনানিতে, জনাব ভন হোলেন পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদান চালিয়ে যাওয়া এবং সামরিকক্ষেত্রে রপ্তানি লাইসেন্সের বৈধতা বজায় রাখার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন, সেটা এইজন্যে যে এর অন্যথা করা হয়তো পূর্ব পাকিস্তানের “আত্মবিরোধ” সময়কালে “এটাকে অনুমোদন এবং অভ্যন্তরীণ সমস্যায় অনুপ্রবেশ হিসাবে দেখা হবে”।

তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে “প্রাণঘাতী নয় এমন” সামরিক জিনিস বিক্রি করা অব্যাহত রাখছে যাতে করে প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান কমিউনিস্ট চীনের মত অন্যকোন উৎসের দিকে ফিরে না তাকায়।

তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, যে চীন এযাবতকাল ধরে পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ করে আসছিল।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!