You dont have javascript enabled! Please enable it!

অলিক কুমার গুপ্ত, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৬) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪৬ সালের ২রা অক্টোবর রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলার মহেন্দ্রপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মনােরঞ্জন গুপ্ত এবং মাতার নাম নমিতা গুপ্তা। তিনি ১৯৬৪ সালে রাজবাড়ীর বেলগাছি আলিমুজ্জামান হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৬৭ সালে রাজবাড়ী কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৬৯ সালে একই কলেজ থেকে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
অলিক কুমার উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ‘৭০-এর নির্বাচন, ‘৭১-এর অসহযােগ আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ৭ই মার্চের দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণসহ প্রতিটি রাজনৈতিক ঘটনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। ২৬শে মার্চের পরবর্তী প্রাথমিক প্রতিরােধে তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশ নেন। ৭ই মে তিনি ভারতের করিমপুরে মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শিবিরে যােগ দেন। সেখান থেকে তাঁকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যুদ্ধকালীন প্রথম ব্যাচ ফার্স্ট বেঙ্গল ওয়ার কোর্সে ক্যাডেট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২৫শে জুন থেকে ৯ই অক্টোবর পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার মূর্তিস্থ ইন্ডিয়ান আর্মি ট্রেনিং একাডেমিতে সফলতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ সমাপ্তির পর তিনি কমিশন প্রাপ্ত হন। অলিক কুমার ১০ই অক্টোবর সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে নিয়মিত বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে ৮নং সেক্টরের সদর দফতরে (কল্যাণী) পােস্টিং পান। ১৩ই অক্টোবর থেকে তাঁকে ৪নং সেক্টরের অধীন বয়রা সাব-সেক্টরে সহকারী অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। এ সাব-সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন খন্দকার নাজমুল হুদা, বীর বিক্রম। ১৭ই অক্টোবর অলিক কুমার ও তার দল ছুটিপুরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৩৮ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্টের প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেন। ২৬শে অক্টোবর তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধারা যশাের- চুড়ামনকাঠি-চৌগাছা সড়কে পাকিস্তানি মিলিশিয়া ও রাজাকার বাহিনীর অবস্থানের ওপর আক্রমণ করেন এবং ঐ সড়কের অধিকাংশ সেতু ধ্বংস করে দেন। তারা ১১ই নভেম্বর চৌগাছা সীমান্তসংলগ্ন মাসলিয়া-চৌগাছা সড়কে এম্বুশ করে ৩৮ ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের একটি অগ্রবর্তী দলের ৯ জন সৈন্যকে হত্যা করেন এবং তাদের মৃতদেহ ভারতে নিয়ে যান। এ এম্বুশে মুক্তিযােদ্ধারা পাকসেনাদের অনেক অস্ত্র-শস্ত্র দখলে নেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার অলিক কুমার গুপ্তকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ২৭৭, খেতাবের সনদ নং ২৭)। মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭২ সালের ২৩শে মার্চ তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবগঠিত (প্রতিষ্ঠা ১২ই ডিসেম্বর ১৯৭১) ১২তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যােগদান করেন এবং ১৯৭৫ সালে মেজর পদে উন্নীত হন। ১৯৮৩ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করে তিনি পরবর্তী ৩ বছর পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৩ সাল থেকে তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালের প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম কান্তা নন্দী। [সাজাহান মিয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!