You dont have javascript enabled! Please enable it!

বধ্যভূমির গদ্য (Unicoded) Part 1

 

বধ্যভূমির গদ্যঃ প্রথম খন্ড

 

কক্সবাজার জেলা

কক্সবাজারে এ পর্যন্ত ৫টি বধ্যভূমি সংরক্ষনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ২০১১ সালে কক্সবাজার পরিদর্শন করে এ সিদ্ধান্ত নেন সরকারি প্রতিনিধি দল। এ ৫টি বধ্যভূমি হচ্ছে – রেস্ট হাউজের সামনের বালুচর, টেকনাফের নাইটং পাহাড়ের পাদদেশ ও মহেশখালী আদিনাথ মন্দির সংলগ্ন এলা কা পাহাড়ের ৩টি স্থান। এর বাইরেও আরো বধ্যভূমি রয়েছে।

০৪

বাহারছড়া বধ্যভূমি

কক্সবাজার শহরের পুরনো রেস্টহাউস ময়দানে এ বধ্যভূমিটি। বর্তমানে এই বধ্যভূমিটি সেনা বাহিনীর ১৭ ইসিবির (ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন) সংরক্ষিত এলাকার মধ্যে পড়েছে। চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবুল হক জানান, এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্প। এখানে সাধারণ মানুষ, মুক্তিযোদ্ধা, নারীদের নির্যাতন করা হতো। বর্ত্মান স্মৃতিস্তম্ভের কাছেই সে সময় গুলি করে হত্যা করা হতো। মুক্তিযুদ্ধের পর এই বধ্যভূমি থেকে উদ্ধার হওয়া অধিকাংশ কঙ্কালই ছিল নারীর। উদ্ধারকৃত খুলিতে মেয়েদের লম্বা চুল ও কাপড় জড়ানো ছিল। এটিকে অনেকে বাহারছড়া বধ্যভূমি হিসেবেও চেনে।

মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বান জানান, যুদ্ধ শেষে কক্সবাজার ফিরে তিনি জানতে পারেন বর্তমান সেনা ক্যাম্প এলাকায় বিপুল সংখ্যক লাশ ছিল। যেগুলো গণকবরে সমাহিত করা হয়।

অন্যসূত্রে বলা হয়েছে-১৯৭২-এ “দৈনিক বাংলা” প্রতিনিধি উল্লেখ করেছেন, “রেস্ট হাউজের স্টোর রুমে সাতটি শুকিয়ে যাওয়া লাশ পাওয়া গেছে। দুটো লাশকে গলাকাটা অবস্থায় দেখা গেছে। রেস্ট হাউজের সামনের কূপে ১১টা নরকঙ্কাল আবিষ্কৃত হয়েছে’। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত সূত্র দৈনিক বাংলা, ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২)

 

টেকনাফ বধ্যভূমি

রামু কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোশতাক আহ্মদ জানান, টেকনাফের নাইট্যং পাড়ায় একটি বধ্যভূমি রয়েছে। ওখানে পাহাড়ে হত্যা, ধর্ষনের ঘটনা ঘটে। ওই লাশগুলো সমাহিত করা হয় গণকবরে। টেকনাফের প্রবীন রাজনৈতিকবিদ আনোয়ার মিয়া জানান, টেকনাফের বধ্যভূমিটি ছিল উপজেলা পরিষদের পশ্চিমের পাহাড়ে। ওখানে বিপুল সংখ্যক মানুষকে হত্যা করা হয়। কক্সবাজারে উখিয়া, রামু, চকরিয়াসহ বিভিন্ন স্থানের মানুষজনকে ধরে এনে পাকিস্তানি হানাদাররা এ হত্যাযজ্ঞ চালায়। বর্ত্মানে এ বধ্যভূমিটির কোন চিহ্ন খুজে পাওয়া যায় না। অধায়পক মাহবুবুল হক জানান, টেকনাফ সেনা ক্যাম্পের কাছেই যে বধ্যভূমি সেখানে পাকিস্তানি সেনা বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। যুদ্ধ শেষে এই বধ্যভূমি থেকেই কমপক্ষে ১১৫ জন মানুষের হাড় ও মাথার খুলি উদ্ধার করা হয়। অন্যসূত্রে বলা  হয়েছে-কক্সবাজারের টেকনাফে সেনানিবাসের সামনের কবর থেকে ৭৭টি নরকংকাল পাওয়া গেছে। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত সূত্রঃ একাত্তরের বধ্যভূমি গণকবরসুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-৫৯৬০; যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা বিচারের অন্বেষণডা. এম হাসান, পৃ.-৩৮২; দৈনিক বাংলা, ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২)

 

মহেশখালির বধ্যভূমি

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় ৩টি বধ্যভূমি রয়েছে। এগুলো হচ্ছে – মহেশখালী আদিনাথ মন্দির সংলগ্ন পাহাড়ের ৩টি স্থান। কক্সবাজার জেলা সিপিবি’র সভাপতি কমরেড দিলীপ দাশ জানান, আদিনাথ পাহাড়ের মইজ্ঞার ঘোনা, মহন্ত ঘোনা ও মোতঘোনায় পাক বাহিনী হত্যাকান্ড চালায়। ওখানে নারী, পুরুষদের ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মম্ভাবে হত্যা করে নরপশুরা।

 

 

কক্সবাজারের অন্যান্য বধ্যভূমি

“মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম” বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক মাহবুবুল হক জানান, কক্সবাজার শহরের মধ্যম নুনিয়াছড়া, শহরতলির কুতুবদিয়া পাড়ার “ফদনার ডেইল” ও উত্তর নুনিয়াছড়ার শেষ সীমানা “গোলার জুড়া” এলাকায় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। কিন্তু সেখানে স্মৃতি চিহ্ন আর নেই। তিনি বলেন, “মধ্যম নুনিয়াছড়া ফিসারি ঘাট এলাকায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ফরহাদসহ ৬জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়”। এ তথ্য দিয়ে তিনি জানান ওই এলাকায় তার বাড়ি হওয়ায় এ ঘটনা সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত।

আনছার হোসেন/ নুপা আলম

 

 

কিশোরগঞ্জ জেলা

“দাড়াও পথিক বর, জন্ম যদি তব এ বঙ্গে, তিষ্ট ক্ষনকাল এ সমাধিস্থলে” বড়াইতলা গণহত্যা শহীদদের স্মরনে নির্মিত স্মৃতিসৌধের ফলকে স্থাপন করা মাইকেল মধুসূদন দত্তের বিখ্যাত কবিতার এ লাইন দু’টি দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ পথিকদের।

 

বড়ইতলা গণহত্যা

“দাড়াও পথিক বর, জন্ম যদি তব এ বঙ্গে, তিষ্ট ক্ষনকাল এ সমাধিস্থলে” বড়াইতলা গণহত্যা শহীদদের স্মরনে নির্মিত স্মৃতিসৌধের ফলকে স্থাপন করা মাইকেল মধুসূদন দত্তের বিখ্যাত কবিতার এ লাইন দু’টি দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ পথিকদের। ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জের বড়ইতলা গ্রামে পাকবাহিনী নৃশংস গণহত্যা করে। একই সঙ্গে ৩৬৫ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে এবং তাদের হাতে আরও দেড় শতাধিক মানুষ আহত হয়। সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া লোকজন গণহত্যার ভয়াবহ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আজও আতংকে শিউরে উঠেন।

প্রত্যক্ষ্যদর্শী ও অন্যান্য সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর বুধবার সকালে একদল পাকসেনা ট্রেনে কিশোরগঞ্জ সদরের (তৎকালীন মহকুমা) নিকটবর্তী কর্শাকড়িয়াইল ইউনিয়নের বড়ইতলা গ্রামে আসে। এ সময় তাড়া গ্রামবাসীকে পাকিস্তানের পক্ষে উদ্বুদ্ধ করতে কর্মসূচি পালন করে। কিন্তু বড়ইতলা গ্রামে প্রবেশের পর পথ হারিয়ে ফেলায় একজন পাকসেনা দলছুট হয়ে পড়ে। কথিত আছে, উদ্বুদ্ধ করণ কর্মসূচী চলাকালে তাদের একজন সেনা কম থকার বিষয়টি পাক সেনা কর্মকর্তাদের নজরে আসে। এ সুযোগে স্থানীয় রাজাকাররা গুজব রটায় যে পাকসেনাকে গুম করেচে গ্রামবাসী। এরপর পাকবাহিনী উন্মত্ত পশুর হিংস্রতা নিয়ে গ্রামবাসীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাকসেনা ও তাদের দোসররা বড়ইতলা, চিকনিরচর, দাম্পাড়া, কালিকাবাড়ি, কড়িয়াইল, তিলকনাথপুর, গোবিন্দপুর ও ভূবিরচর গ্রামের পাচ শতাধিক লোককে জোর পূর্বক ধরে এনে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব রেল লাইনের পাশে বড়ইতলা গ্রামের একটি স্থানে জড়ো করে। গ্রামবাসীদের লাইন করে দাঁড় করিয়ে পাকসেনারা বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে, রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে ও গুলি করে শুরু করে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। বর্বর এ হত্যাযজ্ঞে ৩৬৫ জন নিহত হয়। আহত হয় দেড় শতাধিক ব্যাক্তি, যাদের অনেকেই গণহত্যা থেকে বেঁচে গেছেন।

চিকনিরচর গ্রামের ফিরোজ উদ্দিন বলেন, “সংগ্রামের সময় পাকবাহিনী বড়ইতলায় সাড়ে ৩শ’ লোক হত্যা করে। আমাদের এলাকা থেকে ৩৫ জন এবং আমাদের পরিবারে আমার বাবসহ ৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে”। মোঃ ইসহাক ভূঁইয়া তার বাবা, চাচা, চাচাত ভাইসহ তার ২২জন আত্মীয় শহীদ হওয়ার কথা জানান।

আহত হয়েও বেঁচে যাওয়া চিকনিরচর গ্রামের মন্তাজ উদ্দিন বলেন, “হত্যাযজ্ঞ শুরু হলে একজন পাকসেনা আমাকে বেয়োনেট দিয়ে মাথায় আঘাত করলে গুরুত্বর আহত হয়ে অচেতন হয়ে মাটিতে লাশের স্তূপের উপর পড়ে যাই। পুরো একদিন আমি লাশের স্তূপের মধ্যে পড়েছিলাম। পরদিন একজন মহিলা আমাকে লাশের স্তূপ থেকে উদ্ধার করে”।

দাম্পাড়া গ্রামের আলী আকবর বলেন, “১৯৭১ সনের ১৩ অক্টোবর এখানে পাকবাহিনী কয়েক হাজার লোক জড়ো করে। এর মধ্যে আমিসহ আমার বাড়ির কয়েকজন লোকও জড়ো হই। এরপর পাকবাহিনী গুলি করে ও বেয়োনেট দিয়ে মানুষ হত্যা করে। আমার আপন চাচা, চাচাতো ভাই, ভাতিজাসহ ৮ জন মারা যায়। আমি লাশের স্তূপের নিচে পড়ে গিয়ে রক্ষা পাই। পাকবাহিনী যাবার পর বের হয়ে আসি। দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মরা লাশের নিচে ছিলাম”।

 

চিকনিরচর গ্রামের জিল্লুর রহমান বলেন, “অনেক লোকজন একসঙ্গে জড়ো করে লাইন করে দাঁড় করিয়ে গুলি ছুঁড়ে লোক মারা শুরু করে। আমি লাশের স্তূপের নিচে পড়ে রক্ষা পাই। পাকবাহিনী যাওয়ার পর লোকজন আমাকে বের করে আনে”।

দামপাড়া গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় শিক্ষক আজিজুল হক, বৃদ্ধা সখিনা বেগম, কালিকাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা মোঃ রুকন উদ্দিন এদিনের বর্ণনা দেন। ২০০০ সালে জেলা পরিষদের উদ্যোগে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

 

হোসেনপুরে কুড়িঘাট বধ্যভূমি

১৯৭১ সালের ১৬ অগাস্ট রাতে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলা সদর বাজারে পাক হানাদার বাহিনী এদেশীয় রাজাকারদের সহযোগীতায় প্রায় ১৫০ জন নারী-পুরুষদের ধরে নিয়ে কুড়িঘাট স্থানে পালাক্রমে হত্যা করে। যাদের অধিকাংশই ছিল হিন্দু ধর্মালম্বী। ওই রাতে গণহত্যার শিকার হয় হোসেনপুর বাজারের হিন্দু ব্যবসায়ী মধুসূদন চন্দ্র সরকার, অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র সত্যেন্দ্র চন্দ্র মোদক, হাইস্কুল রোডের ব্যবসায়ী মনিন্দ্র চন্দ্র সাহা, স্বদেশ চন্দ্র সাহা, সাহেবেরচর গ্রামের হেলাল উদ্দিনসহ অজ্ঞাত পরিচয় হিন্দু নারী-পুরুষ। গভীর রাআতে হোসেনপুর বাজারের পশ্চিম পট্টি এলাকার হিন্দু ব্যবসায়ী ভবতোষ চন্দ্র সরকার (দুলাল) এর আট মাসের গর্ভবতী স্ত্রী বকুল রানী সরকার ও পরিবারের সদস্যদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওই স্থানে ধরে নিয়ে যায়। হাত বেঁধে বকুল রানি সরকারকে গলায় গুলি করার পর আহত অবস্থায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানিতে ভেসে হনুমান তলায় আটকা পড়েন। পরে ওই এলাকার লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। কিছুদিন পর বকুল রানী সরকার পঙ্গু কন্যা সন্তানে জন্ম দেন। লাভনী রাণী সরকার নামে প্রতিবন্ধী মেয়েটি বর্তমানে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা সংঘটিত হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য লড়াই করে হোসেনপুর এলাকা থেকে হানাদার ও রাজাকারদের বিতাড়িত করে।

গণহত্যার ভয়াল রাতে গুলি খেয়ে বেঁচে যাওয়ায় বকুল রাণী সরকার বলেন, “আমার পরিবারসহ শতাধিক নারী-পুরুষকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার হওয়া উচিৎ”।

হোসেনপুর ডিগ্রী কলেজের পশ্চিম পাশে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে কুড়িঘাট রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় জনসাধারণ থমকে দাঁড়ায়। স্মরণ করে শহীদদের আত্মত্যাগের কথা।

 

ইটনা বয়রা বধ্যভূমি

কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে ’৭১-এর বহু বধ্যভূমি। হাওর অধ্যুষিত ইটনার বয়রা এলাকায়ও রয়েছে এমনই এক বধ্যভূমি। মুতিযুদ্ধকালে বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু বাঙালিকে পাক হানাদাররা স্থানীয় দোসরদের সহায়তায় ধরে এনে নারকীয় কায়দায় হত্যা করে মাটিচাপা দেয়। আবার অনেক লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়। বয়রা বধ্যভূমিতে এখন পর্যন্ত স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধকালীন ইটনার জয়সিদ্ধ এলাকায় বয়রা বধ্যভূমিতে বহু মানুষকে গুলিতে বা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। অনেককে জ্যান্ত মাটিচাপা দেওয়ার মত লোমহর্ষক ঘটনাও শোনা যায়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হাওর এলাকার মানুষ, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষগুলো বয়রার পাশ দিয়েই নৌকায় ভারতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে যেতেন। আর হানাদারারা রাজাকার আলবদরের সহায়তায় এসব পরিবারকে আটক করে গোটা পরিব্রকেই নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। ‘বয়রা বধ্যভূমিতে হাওরের বিভিন্ন এলাকার মানুষকে হত্যা করা হলেও মিঠামইনের ছত্রিশ এবং ঢালারগাও গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরাই বেশি হত্যাযজ্ঞের শিকার হয় অনেকে বলে থাকেন। কোনো কোনো পরিবারের সব সদস্যই শহীদ হয়েছেন। পরবর্তীতে স্বার্থাণেষী মহল এসব পরিবারের জমিজমা বাড়িঘর দখল করে নেয়।

 

শোলমারা বধ্যভূমি

কিশোরগঞ্জে সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের শোলমারা বধ্যভূমিটি এখনো এ এলাকার মুক্তিকামী মানুষের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ১৯৭১ সালের সদর উপজেলার পরিষদের খুব কাছে মহিনন্দ ভদ্রপাড়ায় বর্তমান ক্ষিরদ্গঞ্জ বাজার ঘেঁষা এককালের খরস্রোতা অন্নার খালের উপর এই শোলমারা সেতুটি ছিল। এটি ছিল ৭১’র পাকহানাদার বাহিনীর অন্যতম একটি বধ্যভূমি। বিভিন্ন এলাকার বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য ও সাধারণ বাঙালিদের ধরে এনে হাত-পা বেঁধে একে একে গুলি করে হত্যা করা হতো। ৭১’র অগাস্টে কোন এক দিন একই সঙ্গে গুলি করে হত্যা করেছিল কিশোরগঞ্জে শহরের আখড়া বাজার এলাকার মুক্তিযোদ্ধা কামরুজ্জামান কামরুর বাবা অবসরপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা নবী হোসেন ভূইয়াসহ ১০ জন বাঙালিকে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে শুধু শোলমারা সেতুতে বিভিন্ন সময়ে আরও অনেক মানুষকে হত্যা করে পাকসেনাদের দোসর বাহিনী। এসব শহীদদের লাশ অনেক ভেসে গেছে অন্যার খাল দিয়ে ভাস্করখিলা বিলসহ আশেপাশের এলাকায়। লাশ গিয়ে ঠেকলে শেয়াল-কুকুর ও মাছে খেয়ে নষ্ট করেছে। এসব লাশের মধ্যে সেখান থেকে উদ্ধারকৃত অজ্ঞাত ৯ শহিদের লাশ গণকবর দেওয়া হয় শোলমারা সেতুর পাশে ইটখালায়। সেখানে জেলা পরিষদ একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করেছে। (তথ্য সংগ্রহে সহযোগীতায়-সাংবাদিক আমিনুল হক সাদী)

 

পানাউল্লাহরচর-আলগড়া বধ্যভূমি

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ১৪ এপ্রিল ভৈররের শিবপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের তীর পানাউল্লাহরচর-আলগড়ায় এক গণহত্যা সংঘটিত হয়। হানাদার বাহিনীর নির্বিচার ব্রাশফায়ারে নিরস্ত্র শিশুসহ অসহায় পাচশতাধিক নারী-পুরুষ নিহত হয়। হানাদার বাহিনীর ভয়ে নিহতদের স্বজনরা লাশ দাফন করতে পারেনি। পরবর্তীতে ৫ শতাধিক (মতান্তরে ৬/৭শ) লাশ ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে গণকবর দেওয়া হয়। ২০০৭ সালে এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়।

রেল জংশন, নদী বন্দর ও সড়ক যোগাযোগের কারণে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভৈরবে প্রথম হানাদার বাহিনী পা রাখে ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল। সেদিন ছিল পহেলা বৈশাখ। ব্যাবসা কেন্দ্র ভৈরবের মানুষ সেদিন ব্যবসার হালখাতা পরিবর্তন, মিলাদ মাহফিল ও মিষ্টি বিতরন নিয়ে ব্যাস্ত ছিল। হঠাত ভৈরবের আকাশে দেখা যায় চারটি জেট বিমান, একাধিক হেলিকপ্টার এবং স্থল্পথে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপার রামনগর সেতু সংলগ্ন স্থানে গানশিপ। পাকবাহিনী ঐ এলাকা থেকে গানশিপ দিয়ে গুলি ছুড়তে ছুঁড়তে শহরের দিকে অগ্রসর হয়। দুপুরে সামরিক বাহিনীর কয়েকটি হেলিকপ্টার থেকে ভৈরবের মধ্যেরচর এলাকায় ছত্রীসেনা নামানো হয়। তখন পাকসেনা দেখে সাধারণ মানুষ প্রাণভয়ে পালাতে থাকে। পাকিস্তানি ছত্রীসেনারা শহরে প্রবেশ করার সময় পথিমধ্যে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগ করে মানুষকে আতঙ্কিত করে তোলে। অপরদিকে হেলিকপ্টার থেকে গ্রামে নামার পর ছত্রীসেনা দল কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে শহরে প্রবেশ করার সময় শিবপুর ইউনিয়নের-পানাউল্লাহরচর-আলগাড়া নামক একটি খেয়াঘাটে অপেক্ষমাণ নিরস্ত্র-নিরাপরাধ পাচ শতাধিক মানুষকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। সেদিন ব্রহ্মপুত্রের জল রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল। আলগড়ার ৫ শতাধিক নিহতের মধ্যে পরে কিছু লাশ তাদের স্বজনরা নিয়ে গেলেও বেশিরভাগ নিহতকে ঐ স্থানে গণকবর দেওয়া হয়। আহতদের মধ্যে আজও অনেকে বেঁচে আছেন।

পাকসেনারা লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করার পরও বেঁচে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা নাছের মিয়া ও আক্কাছ আলী জানান, সেদিনের নির্মম ও পৈশাচিক দৃশ্য মনে হলে আজও গা শিউরে ওঠে। তাদের প্রশ্ন কেন অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে এই বধ্যভূমিটি। তবে ভৈরবের সাধারণ মানুষ দিনটিকে গণহত্যা ও কালো দিবস হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। মারুফ আহমেদ

 

কুমিল্লা জেলা

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের অনুচর রাজাকার-আল্বদর আল শামসরা মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে কুমিল্লায় অন্তত বিশ হাজার লোককে তারা হত্যা করে। হাজার হাজার নারী ধর্ষিত হন। এখনো অনেক গণকবর অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে।

 

ময়নামতি সেনানিবাসের বধ্যভূমি

২৫ মার্চের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে সব সেনানিবাসে সবচেয়ে বেশি হত্যাযজ্ঞ চালায় কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাস তার মধ্যে অন্যতম। ময়নামতি সেনানিবাসে আটকা পড়া অধিকাংশ বাঙালি সামরিক কর্মকর্তা ও জোয়ান আর বেরিয়ে আসতে পারেনি। ভাষা সংগ্রামের রূপকার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক শামছুল হক খান, কুমিল্লা পুলিশ সুপার কবির উদ্দিন আহমেদকে এখানে হত্যা করা হয়। এই সেনানিবাসের জুতা মেরামতকারী মন্সুর আলী জানান, এখানে আর্মি এডুকেশন কোরের ক্যাম্পটেন মকবুলসহ মোট ২৪ জনের লাশ একটা গর্তে মাটি চাপা দেওয়া হয়। এ রকম অসংখ্য গর্তে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে কয়েক হাজার লাশ।

১৯৭২ সালের ১১ জুন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার এক খবরে বলা হয়, কুমিল্লা সেনাইবাসের ব্রিগেড মসজিদের উত্তর পাশে আরও একটি গণসমাধির খোঁজ পাওয়া গেছে। কুমিল্লা সিএনএইর আর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্ণেল খুরশেদ উদ্দিনের বলেন, সামরিক অফিসার ও বেসামরিক লোকসহ প্রায় ৫শ’ বাঙালিকে হত্যা করে হানাদার পাকবাহিনীর এখানে পুঁতে রাখে। এই হত্যাযজ্ঞের কোনো হদিস যেন না পাওয়া এজন্য পাক বাহিনী বেশ সতর্কতা অবলম্বন করেছিল। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত সূত্রঃ হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র, অষ্টম খণ্ড; দৈনিক পূর্বদেশ, ২৯ জানুয়ারি, ২৮ ফেব্রুয়ারি ১০ মার্চ ১৯৭২; দৈনিক বাংলা, ২১ ২৬ জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি ১৯৭২)

 

লাকসাম সিগারেট কারখানা বধ্যভূমি

লাকসাম জংশনের দাঁড়িয়ে দক্ষিন পশ্চিম দিকে দৃষ্টি মেলে ধরলে দেয়াল ঘেরা সুবিশাল এলাকা জুড়ে কালো রঙ মাখা যে দ্বিতল ভবনটী দেখা যাবে সেটা একটি সিগারেট কারখানা। কিন্তু তার নাম যা-ই থাকুক না কেন লাকসামবাসী এটাকে হত্যাপুরী বলেই জানে। যুদ্ধের নয় মাসে এই কারখানায় বিভিন্ন কোণায়, কক্ষে ও ছাদে বাঙালিদের ওপর অত্যাচার, নারী ধর্ষণ এবং গণহত্যা চলে। দিনে রাতে যখন তখন লাকসাম থানার বিভিন্ন গ্রামেগঞ্জে হানা দিয়ে গ্রাম বাংলার নিরীহ পুরুষদের এবং লাকসাম জংশনে অপেক্ষমাণ ট্রেন থেকে যুবক, যবতী ও যাত্রীদের এই হত্যাপুরীতে ধরে আনা হতো। অন্য যে সব সূত্রে এই ঘটনাটি পাওয়া যায় – (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত সূত্রঃ হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র, অষ্টম খণ্ড)

 

বেলতলির বধ্যভূমি

কুমিল্লার লাকসাম থানা সদরের একটু দক্ষিণে বেলতলিতে রয়েছে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের আরেক নিদর্শন। বেলতলিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নির্মিত বাংকারের পাশেই মুক্তি পাগল অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে মাটিতে পুঁতে রাখে তারা। সেখানে খুঁড়লেই এখনো বেরিয়ে আসে একাত্তরের সোনার ছেলেদের হাড়গোড়-কঙ্কাল। কুমিল্লা সেনানিবাসের পর বাঙালি নিধনযজ্ঞের বড় ঘটনা ঘটে লাকসামে। লাকসামের “চাদপুর ট্যোব্যাকো কোম্পানি’র কারখানাটি ছিল তাদের শক্তিশালী ঘাঁটি। (সূত্রঃ গিয়াস উদ্দিন ফরহাদ, বেলতলির বধ্যভূমি, দৈনিক জনকণ্ঠ, ঢাকা, ১৭ অক্টোবর ১৯৯৯)

 

ধনাঞ্জয়ের খন্দকার বাড়ির হত্যাযজ্ঞ

’৭১ এর ১১ সেপ্টেম্বর ভোরবেলা থেকে কুমিল্লার আমড়াতলি ইউনিয়নের সর্বত্র প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিলো। গুলির শব্দ শুনে এই এলাকার লোকজন কৃষ্ণপুর-ধনাঞ্জয়-শিবের বাজার হয়ে পার্শ্ববর্তী বড়জ্বালা সীমান্ত পার হয়ে ভারতে চলে যায়। আবার অনেকে বাড়ির মায়ায় থেকে যান। পার্শ্ববর্তী মাঝিগাছা গ্রামের নারী পুরুষও এই পথে ভারতে চলে যাচ্ছিলেন। সুর্য যখন প্রায় মাথার উপর এমন সময় চারদিক থেকে পাকবাহিনী তাদের ঘিরে ফেলে। ছোটাছুটি করে ২৬ জন এক ঘরে ঢুকে কাঠের দরজা বন্ধ করে দেয়। পাকবাহিনী ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। মন্তাজ আলী নামে একজন ঘরের ভিতর একটি কাথের আলমারিতে ঠুকে পড়েন। পাক বাহিনী আলমারি না খুলে বাইরে থেকে গুলি করে। আলমারির কাঠের দরজা ছেদ করা সেই গুলিতে মন্তাজ আলী মারা যান। ব্রাশ ফায়ারে নিহত এক মায়ের স্তনে মুখ দেওয়া অবস্থায় পড়ে ছিল গুলিতে নিহত এক শিশু। সেও হয়। গুলিতে হিরণ নামে এক যুবকের হাতের মাংশ ছিন্ন হয়ে যায়। সে আজও বেঁচে আছে। সেদিন এখানে ২৬ জন শহীদ হন। এছাড়াও বাড়ির বিভিন্ন স্থানে আরো দশজনকে গুলি করে হত্যা করে ইয়াহিয়ার নরপশুরা। চার ঘন্টা ধরে চলে এই নরকীয় হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় শহীদ শামসুল হুদা খন্দকারের স্ত্রী আফিয়া খাতুন আজও বেঁচে আছেন। ১১ সেপ্টেম্বর হায়েনার দলের নারকীয় তাণ্ডবে যারা শহীদ হয়েছেন তাড়া হচ্ছেন শরাফত আলী ও তার মেয়ে হাফেজা খাতুন, শামসুল হুদা খন্দকার, মো. কেরামত আলী, আব্দুর হালিম, মো. চক্ষু মিয়া, মন্তাজ আলী, আব্দুল লতিফ, মোহাম্মদ আলী, ফরসান বিবি, আব্দুর রাজ্জাক, রোকেয়া খাতুন, জোহরা বেগম, সালেহা বেগম, জসিম উদ্দিন, সেলিম মিয়া, রজ্জব আলী, রমিজ উদ্দিন, রহিম আলী, মেহেরুন্নেসা। (সূত্রঃ আবুল কাশেম হৃদয় – ‘গ্রামের নাম ধনাঞ্জয় ।। স্মৃতি ১৯৭১’, ‘নির্মম নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী হয়ে আছে ৩৫ জনের গণকবর’, দৈনিক রূপসী বাংলা কুমিল্লা, নভেম্বর ১৯৯৭)

 

মুদাফফরগঞ্জের নগরীপাড়ার গণকবর

’৭১ এর নভেম্বর লাক্সাম থানার মুদাফফরগঞ্জের নগরীপাড়ার কর্মকার বাড়িতে থাকতেন পেয়ারী মোহন। স্বাধীনতার পর প্রকাশিত আঞ্চলিক পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক আমোদ’ – এ এক প্রত্যক্ষদর্শী উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, পেয়ারী মোহনের চতুর্দশী মেয়ে আরতি বালাকে অপহরণ করার জন্য একদিন রাজাকার ও পাকসেনারা এ বাড়িতে হামলা করে। সেদিন কিছু টাকার বিনিময়ে তাড়া রক্ষা পান। ক’দিন পর ২৮ নভেম্বর রাত ১১টায় মাওলানা আরিফ, সত্তর এবং আলী আজম নামক তিন রাজাকারের নেতৃত্বে ৬/৭ জন রাজাকার ও এক পাকসেনা কর্মকার বাড়িতে ঢুকে ফাঁকা গুলির আওয়াজ করে।

গুলির আওয়াজ শুনে উমেশ চন্দ্র কর্মকারের স্ত্রী ঊষা রাণী ঘরের দরজা একটু ফাঁক করে দেখেন যে, কয়েকজন লোক উঠানে দাঁড়িয়ে আছে। এ সময় অন্যান্য ঘর থেকে উমেশ চন্দ্রের বাবা যাদব কর্মকার (৭২) ও ভাই ভুবন চন্দ্র কর্মকার (৩৫), ক্ষেত্র মোহন কর্মকার (৩১), রাধাকৃষ্ণ কর্মকার (৬০), নিত্যানন্দ কর্মকার (২৮), অমূল্য কর্মকার (১৮) ও অটল বিহারী কর্মকার (৩০) কে বের করে রাইফেলের বাট দিয়ে পেটাতে থাকে হানাদাররা। কয়েকজন রাজাকার বাড়ির নারীদের মারধর শুরু করে এবং আরতি বালাকে ধরে নিয়ে যায়। পাঁচ পরিবারের ঐ দশজন পুরুষকে রাজাকাররা ৫শ’ গজ দূরে একটি বট গাছের কাছে হাত বেঁধে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে।

পরদিন সকালে গ্রামের লোকজন সেখানে গিয়ে লাশগুলোর মধ্যে ভুবন চন্দ্র কর্মকারকে জীবিত অবস্থায় দেখতে পায়। ভুবন চন্দ্র তার ৮/৯ বছরের ছেলে মানিককে জল খাওয়ানোর জন্য বলে। ছেলেটি জল আনতে বাড়িতে গেলেও পার্শব্বর্তী পুলের উপর থেকে পাকসেনারা গুলি করে। মানিক আর পানি আনার সুযোগ পায়নি। নরপশুরা রাস্তার উপরেই গর্ত করে লাশগুলোর সঙ্গে জীবিত অবস্থায় ভুবন চন্দ্রকে মাটি চাপা দেয়। (সূত্রঃ আবুল কাশেম হৃদয়, একটি গণহত্যা, বিধবার মানবেতর জীবন, দৈণিক রূপসী বাংলা, ডিসেম্বর ১৯৯৮)

 

হোমনার বধ্যভূমি

হোমনা-শ্রীমতি সড়কে পুরাতন ডাকবাংলা পার হয়ে একটু পশ্চিম এগিয়ে গেলে চোখে পড়ত একটি পুকুর। এটি ছিল গণেশ নাথের। অগণিত বাঙালিকে দলবদ্ধভাবে চোখ-হাত বেঁধে সে জীবিতই হোক আর মৃতই সবাইকে এই পুকুর পাড়েই মাটি চাপা দেওয়া হয়। এ বধ্যভূমি ভরাট করে এখন কলেজ নির্মান করা হয়েছে।

এই বধ্যভূমিতে কালমিনা, ঘাগুটিয়া, আলীপুর ও দড়িচর থেকে জুলাইয়ের দিকে জাহেদ আলম, মুখলেসুর রহমান, সিরাজ ভূঁইয়া আলেক মিয়াসহ ১০ জনকে, অগাষ্টের মাঝামাঝি চম্পকনগর ও রঘুনাথপুরের কাছ থেকে ১০/১৫ জনকে ধরে এনে হত্যা করে পুকুরের পাড়েই মাটি চাপা দেওয়া হয়। সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে বাঞ্ছারামপুরগামী একটি ফেরি থেকে ২৫/৩০ জন পুরুষ, মহিলা ও শিশুকে ধরে হোমনা থানায় আনা হয়। মধ্যরাতে নারীদের রেখে পুরুষ ও শিশুদের হত্যা করে এই পুকুর পাড়েই মাটি চাপা দেওয়া হয়। (সূত্রঃ মো. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ‘৭১র গণহত্যা বধ্যভূমিঃ কুমিল্লার হোমনা থানা, দৈনিক রূপসী বাংলা, ১৫ ডিসেম্বর ১৯৯৮)

 

রসুলপুর ও দিশাবন্দের বধ্যভূমি

স্টেশনের নাম রসুলপুর, পূর্ব নাম ছিল ফকির হাত। কুমিল্লা শহর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার উত্তরে রেল লাইনের পাশঘেঁষে অবস্থিত একটি শান্ত গ্রাম। সেখানে পাক হানাদার বাহিনীর একটি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল। নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিদের স্টেশন সংলগ্ন ভ্যাঙ্গরা বাড়িতে স্থাপিত এ ক্যাম্পে এনে নির্মম্ভাবে হত্যা করা হতো।  তাদের বধ করার কৌশল ছিল বড়ই করুণ – লোমহর্ষক। ধরে আনা নিরীহ মানুষগুলোকে দিয়েই গর্ত খুঁড়িয়ে তাদেরকে গর্তে নামার নির্দেশ দেওয়া হতো, এরপর তারা করত ব্রাশফায়ার। পাশের জনকে ডেকে এনে নির্দেশ দেওয়া হতো মাটি চাপা দিতে। এভাবে অন্তত দু’হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছে। (সূত্রঃ মোস্তফা হোসেইন, মফিজুলের নিজের খোঁড়া কবরে শায়িত দুশতাধিক বাঙালি)

 

হাড়াতলি গণকবর

২১ নভেম্বর কুমিল্লার লাকসাম থানার হাড়াতলিতে ৩৪ জন মুক্তিযোদ্ধা অসীম সাহসিকতায় প্রতিহত করে অত্যাধুনিক অস্ত্র সজ্জিত এক বিশাল পাকিস্তানি কনভয়। খবর আসে পাকবাহিনীর ২’শ সেনার এক কনভয় গৈয়ারভাঙা যাবে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিরোধের সকল প্রস্তুতি নেয়। পার্শ্ববর্তী গ্রামের দুই প্লাটুন যোদ্ধাসহ অবস্থানরত ক্যাপ্টেন মাহাবুবের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করেন। তিনি পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ করার নির্দেশ দেন এবং পরবর্তীতে তিনি প্লাটুন দিয়ে কভার করবেন বলে আশ্বাস দেন। তার নির্দেশ অনুযায়ী জহিরুল ইসলামের নেতৃতাধীন ৩৪ জন মুক্তিযোদ্ধা দুই দলে ভাগ হয়ে যায়। এক দল হাড়াতলি গ্রামের রাস্তার বাঁকে অবস্থান গ্রহণ করে। পাকবাহিনীর দল হাড়াতলি গ্রামের রাস্তার মোড় পর্যন্ত আসলে মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিত আক্রমণ চালায়। সঙ্গে সঙ্গে পাক সেনারাও বিপরীত দিকে চানমইল্লা নদীর এবং রাস্তার পুব্দিকের ধান ক্ষেতের মধ্যে অবস্থান নেয়। শুরু হয় যুদ্ধ। দুপুর একটা থেকে একটানা সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত চলে যুদ্ধ। এ যুদ্ধে মোখলেছুর রহমান, হারুনুর রশীদ, দেলোয়ার হোসেন, মনোরঞ্জন সিংহ, ইজ্জত আলী নামে ৫জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাদেরকে হাড়াতলিতে সমাহিত করা হয়। (সূত্রঃ আবুল কাশেম হৃদয়মুক্তি সংগ্রামে কুমিল্লা; জহিরুল ইসলাম সম্পাদিতদাবানল, কুমিল্লা, ১৯৮৩)

 

নারায়ণপুর গণকবর

পয়লাগাছা ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামে রয়েছে ছয়জন মুক্তিযোদ্ধার কবর। একাত্তরের ১৮ সেপ্টেম্বর তারা সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন। গ্রামবাসী তাঁদের একটি কবরে সমাহিত করেন।

১৮ সেপ্টেম্বর বরুড়া থানার পয়ালগাছা ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামে পাকবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ফিরোজ আহম্মেদ এর নেতৃত্বে এ স্মমুখ যুদ্ধে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পাক বাহিনীরও ২ জন জুনিয়র অফিসারসহ ৫ জন নিহত হয়। এ সংবাদটি বিবিসি সম্প্রচার করে। এ যুদ্ধে যারা শহীদ হন তারা হলেন – সিরাজুল ইসলাম, কাজী আরিফ হোসেন, আব্দুল রব, জয়নাল আবেদিন, সিরাজুল ইসলাম। (সূত্রঃ মুক্তি সংগ্রামে কুমিল্লাআবুল কাশেম হৃদয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত সুত্রঃ একাত্তরের বধ্যভূমি গণকবরসুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-৭৬, যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা বিচারের অন্বেষণডা. এম হাসান, পৃ.-৩৮৪)

 

হাড়ং গণকবর

কুমিল্লার চান্দিনা থানায় হাড়ং গ্রামের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার বাড়ির পাশে তারা এক খন্ড জমি পাক হানাদার ও তাঁদের দোসররা গণকবর হিসেবে ব্যবহার করে। পাকসেনারা যাকে যেখানে হত্যা করতো তাঁকেই এখানে পুঁতে ফেলতো। আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার মাকেও হানাদারের দোসররা এখানে মাটিচাপা দেয়। ১৮ জন মুক্তিযোদ্ধাকে এখানে গণকবর দেওয়া হয়েছে। এই জমিটি আজও কেউ ব্যবহার করে না। তবে এখানে কোন স্মৃতিসৌধও নির্মিত হয়নি। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত সূত্রঃ মুতিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস, তৃতীয় খন্ড –  আবু মোহাম্মদ দেলয়ার হোসেন সম্পাদিত, পৃ.-৯৫, ৯১১০০)

 

বেতিয়ারা গণকবর

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অয়াশে বেতিয়ারা গ্রামে রয়েছে গণকবর। এই কবরে শায়িত আছেন ৯জন মুক্তিযোদ্ধা। একাত্তরের ১১ নভেম্বর চৌদ্দগ্রাম থানার জগন্নাথদিঘি ইউনিয়নের বেতিয়ারা গ্রামে পাকসেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে এই মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হন। এঁরা হচ্ছেন – নিজামউদ্দিন আজাদ, আওলাদ হোসেন, সিরাজুম মুনির, জহিরুল হক দুদু, বশিরুল ইসলাম, মো. শহীদুল্লাহ, কাইয়ুম, সফিউল্লাহ ও আব্দুল কাদের।

ন্যাপ, সিপিবি ও ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর দ্বিতীয় ব্যাচের ৪ শতাধিক যোদ্ধা ভারতের আসাম রাজ্যের দরং জেলার তেজপুরে স্পেশাল গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে ত্রিপুরার বাইকোরাতে বেইজ ক্যাম্পে অবস্থান নেয়। ১০ নভেম্বর বেইজ ক্যাম্পসহ অন্যান্য ক্যাম্প থেকে গেরিলা বাহিনীর ৭৮ জন গেরিলা যৌদ্দগ্রাম থানার ভৈরব নগর সাব ক্যাম্পে আসে। বেতিয়ারা চৌধুরী বাড়ির পাশে এম্বুশ পাতা হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা রওনা হন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল নোয়াখালী সেনবাগ ও কানকির হাটে একটি মুক্তাঞ্চল গঠন করা। ১১ নভেম্বর গভীর রাতে দলটি সারিবদ্ধভাবে মহাসড়কের ওপর ওঠার সময় সড়কের পাশের গাছের আড়াল থেকে পাক সেনারা

 

 

কুড়িগ্রাম জেলা

২৩ রমজান। ফজরের নামাজের আগে হঠাত করে চারিদিক থেকে বৃষতির মতো গুলি আর মর্টার সেলের গোলা বর্ষণ শুরু হয়। ঘুমন্ত মানুষ হঠাত জেগে দিকবিদিক ছুটতে থাকে। কিন্তু চারদিক ঘিরে ছিল পাক হানাদার বাহিনী। তাঁদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি উলিপুরের অনন্তপুর, রামখানা, নয়াডরা, বাগুয়া, নীলকন্ঠ, দাগার কুটিসহ ৭টি গ্রামের মানুষ।

 

কুড়িগ্রামে ৫ কারারক্ষীর প্রথম বধ্যভূমি

১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল পাকিস্তানি হান্দার বাহিনী রংপুর সেনানিবাস থেকে রেলপথে কুড়িগ্রাম কারাগার ইনচার্জ ও ৫ কারারক্ষীকে ধরে এনে বিকাল সড়ে ৫টার দিকে বর্তমান সার্কটি হাউজের সামনের রাস্তার পূর্বদিকে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় মরুয়ে ৬ জনকে গুলি করে। ঘটনাস্থলে নিহত হন কারারক্ষী লাল মোহাম্মদ, আনছার আলী, সাজ্জাদ হোসেন ও জহির উদ্দিন। গুলিতে গুরুত্বর আহত কারাগার ইনচার্জ শেখ হেদায়েত উল্যাহ রাত ১১টার দিকে মারা যান। গুলিবিদ্ধ কারারক্ষী আব্দুল জলিল ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। পাকবাহিনী রংপুর ফিরে যাওয়ার পর রাতে স্থানীয় অধিবাসী হারুন অর রশীদ লাল, মতিউল ইসলাম চৌধুরী নয়া ও রজব আলীসহ কয়েকজন ৫টি লাশ উদ্ধার করে কারাগারের পাশে একটি বড় গর্ত খুড়ে কাফন ছাড়াই দাফন করেন। এটিই ছিল পাকবাহিনীর কুড়িগ্রামে প্রথম হামলা। সংরক্ষনের অভাবে কবরগুলো এখন নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম টুকু জানান, নিহত এই কারারক্ষীরা মুক্তিযুদ্ধকালীন জেলার প্রথম শহীদ।

 

সার্কটি হাউজ বধ্যভূমি

৭ এপ্রিল হত্যাকাণ্ড চালিয়ে গেলেও পুনরায় ১৪ এপ্রিল কুড়িগ্রামে স্থায়ীভাবে ঘাঁটি গেড়ে বসে। তারা সার্কটি হাউজকে হত্যা ও নির্যাতন কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করত। মজিবর মহুরি ও লালু মণ্ডলসহ আরও অনেককে ধরে এনে নির্যাতন করা হয়। এছাড়া পলাশবাড়ি থেকে ১৪/১৫জনকে ধরে এনে নির্যাতন শেষে হত্যা করা হয়। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্রঃ যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা বিচারের  অন্বেষণডাঃ এম হাসান, পৃ.-৪১০৪১১; একাত্তরের বধ্যভূমি গণকবরসুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-৮১; মুক্তিযুদ্ধ কোষ, দ্বিতীয় খন্ডমুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ.-৪৫)

 

ফুড অফিস বধ্যভূমি

৭ এপ্রিল পাকসেনারা কুড়িগ্রাম শহরে গণহত্যা চালায়। স্থানীয়রা জানায় কুড়িগ্রামের ফুড অফিসে বধ্যভূমি খনন করলে শহীদদের কঙ্কালের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্রঃ যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা বিচারের অন্বেষণডাঃ এম হাসান, পৃ.-৪১০৪১১; একাত্তরের বধ্যভূমি গণকবরসুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-৮১; মুক্তিযুদ্ধ কোষ, দ্বিতীয় খন্ডমুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ.-৪৫)

 

হাতিয়ার দাগারকুটি বধ্যভূমি

১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের দাগারকুটি এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে ৬৯৭ জন মানুষকে হত্যা করে। সেদিন ছিল ২৩ রমজান। ফজরের নামাজের আগে হঠাত করে চারিদিক থেকে বৃষতির মতো গুলি আর মর্টার সেলের গোলা বর্ষণ শুরু হয়। ঘুমন্ত  মানুষ হঠাত জেগে দিকবিদিক ছুটতে থাকে। কিন্তু চারদিক ঘিরে ছিল পাক হানাদার বাহিনী। তাঁদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি উলিপুরের অনন্তপুর, রামখানা, নয়াডরা, বাগুয়া, নীলকন্ঠ, দাগার কুটিসহ ৭টি গ্রামের মানুষ। পাকবাহিনী ৬৯৭ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে দাগার কুটি গ্রামের খালের পাড়ে জড়ো করে কাউকে গুলি করে এবং কাউকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে।

এসব শহীদদের স্মরণে অনন্তপুর দাগারকুটি গ্রামে তৈরি করা হয়েছিল স্মৃতিসৌধ। এই স্মৃতিসৌধের এখন কোন চিহ্ন নেই। কয়েক বছর আগে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে দাগারকুটি বধ্যভূমিসহ স্মৃতিসৌধ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এখন হাতিয়া ইউনিয়নের পরিষদ চত্বরে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।

তবে, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্যে বলা হয়েছে, সেদিন এখানে পাকবাহিনী প্রায় ৭৬৪ জনকে হত্যা করে, ঘন্টাখানেকের মধ্যে গুলি করে সবাইকে হত্যা করে সেখানেই পুঁতে রাখে। এসব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অনন্তপুরের তাহফেল মিয়া। তার অন্তত ৪০০ লোককে গুলি করে হত্যা করতে দেখেছেন। (সূত্রঃ যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা বিচারের অন্বেষণডাঃ এম হাসান, পৃ.-৪১১; একাত্তরের বধ্যভূমি গণকবরসুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-৮১৮২; মুক্তিযুদ্ধ কোষ, চতুর্থ খন্ডমুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ.-২৭৭; দৈনিক সংবাদ, ১৩ নভেম্বর ১৯৯৯)

 

 

 

জজ কোর্ট পুকুর বধ্যভূমি

কুরিগ্রাম জজকোর্টের সামনের পুকুর পাড়ে পাক বাহিনীর বধ্যভূমি ছিল। (সূত্রঃ যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা বিচারের অন্বেষণডাঃ এম হাসান, পৃ.-৪১০৪১১; একাত্তরের বধ্যভূমি গণকবরসুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-৮১; মুক্তিযুদ্ধ কোষ, দ্বিতীয় খন্ডমুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ.-৪৫)

 

রিভারভিউ হাইস্কুল বধ্যভূমি

পাক হানাদার বাহিনী কুড়িগ্রাম রিভারভিউ হাইস্কুলসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে লোকজন ধরে এনে পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। (সূত্রঃ যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা বিচারের অন্বেষণডাঃ এম হাসান, পৃ.-৪১১; একাত্তরের বধ্যভূমি গণকবরসুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-৮১; মুক্তিযুদ্ধ কোষ, দ্বিতীয় খন্ডমুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ.-৪৫)

 

ভুরুঙ্গামারী সিও অফিস বধ্যভূমি

শত শত নারী পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নির্যাতিত ও ধর্ষিত হয়েছেন। ভুরুঙ্গামারী সিও অফিসের (বর্তমান থানা পরিষদ কার্যালয়) দোতলা থেকে ধর্ষিত ও বন্দি ২০/৩০ জন নারীকে উদ্ধার করা হয়। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্রঃ যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা বিচারের অন্বেষণডাঃ এম হাসান, পৃ.-৪১১; একাত্তরের বধ্যভূমি গণকবরসুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-৮১; মুক্তিযুদ্ধ কোষ, দ্বিতীয় খন্ডমুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ.-১৯৬১৯৭)

 

মণ্ডলের হাট বধ্যভূমি

পাক হানাদার বাহিনী কুড়িগ্রামের উলিপুরের মণ্ডলের হাটে ‘অপারেশন’ চালিয়ে ২১ জন বাঙালিকে হত্যা করে। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্রঃ যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা বিচারের অন্বেষণডাঃ এম হাসান, পৃ.-৪১১; একাত্তরের বধ্যভূমি গণকবরসুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-৮১)

 

ডাকবাংলো গণকবর

কুড়িগ্রামের উলিপুর ডাকবাংলো ছিল গণহত্যা ও নারী নির্যাতনের প্রধান কেন্দ্র। রেল লাইনের ধারে অবস্থিত ডাকবাংলোয় মুক্তিযুদ্ধের সময় কেউ গিয়ে ফিরে আসার নজির নেই। পাকসেনাদের খেতাবপ্রাপ্ত অস্থায়ী মেজর শাহাবুদ্দিন এবং রাজাকাররা গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে মেয়েদের ধরে এনে এই ক্যাম্পে সরবরাহ করতো। মেয়েদের সবসময় ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হতো। নির্যাতন ও ধর্ষন করার পর বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাঁদের হত্যা করা হতো। তারপর রাজাকাররা ডাকবাংলোর আশেপাশে তাঁদের লাশ গর্ত খুঁড়ে পুঁতে রাখতো। এভাবে এই ডাকবাংলোয় ঘাতক নরপশুরা যে কত নারী ও পুরুষকে নির্যাতন ও হত্যা করেছে তার হিসাবনিকেশ আজ পর্যন্ত মেলানো সম্ভব হয়নি। স্বাধীনতার পর ডাকবাংলোর চারদিকে ৮/১০টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। দুটি গর্তে নিহত মেয়েদের হাতের আঙুল ও মাথার চুল ওপরে ভেসে থাকতে দেখা গেছে। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস, দ্বিতীয় খন্ডআবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন সম্পাদিত, পৃ.-১৯৮১৯৯)

 

চর বেরুবাড়ি বধ্যভূমি

১৯ শে নভেম্বর তিন প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধার সাথে পাকবাহিনীর মুখোমুখি গুলি বিনিময় শুরু হয়। গেরিলা মুক্তিযোদ্ধারা গুলি মোকাবেলা করেই পিছু হটতে হটতে দুধকুমোর নদীতে চলে আসে। পাকিস্তানিদের ভারী অস্ত্রের গুলির কাছে মুক্তিযোদ্ধারা টিকতে না পেরে যে যার মত করে নদী অতিক্রম করে। তিন চার ঘন্টার যুদ্ধে উভয় পক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটলে পাক সেনারা গোটা গ্রাম জ্বালিয়ে দেয় এবং চর বেরুবাড়ী স্কুলের ক্যাম্পটি পাক আর্মি দখলে নেয়। স্কুল মাঠে ব্রাশ ফায়ার করে ২০/২৫ জন সাধারণ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। এ যুদ্ধে শামসুল হকের নেতৃত্বাধীন কোম্পানী গুলো ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়। তিরিশটির মত আগ্নেয়াস্ত্র নদীতে হারিয়ে যায়, কোম্পানী কমান্ডার মুহম্মদ শান্সুল হক ২০শে নভেম্বর পুনরায় বেরুবাড়ীতে ঢুকে সঙ্গী মুক্তিযোদ্ধা বশির এবং আব্দুস সামাদ এর লাশ উদ্ধার এবং আরও ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হবার বিষয়টি নিশ্চিত হন। গ্রামবাসীর মতে পাক আর্মি তাঁদের ২০/২৫টি সৈন্যের লাশ নিয়ে যায় এবং তাঁদের ৫০/৬০ আহত হয়েছে।

অন্য সূত্রে, অক্টোবরের শেষে রমজান মাসে রাজাকার ও ইপিক্যাফের একটি দল বেরুবাড়ি আসে এবং লোকজনের কাছে সোনাদানা, টাকা পয়সা ইত্যাদি দাবি করে। খবর পেয়ে কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নান্নু হামলা চালিয়ে তাঁদের তাড়িয়ে দিয়ে নিরাপদে ফিরে আসে। এদিকে রাজাকাররা কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে এসে পাকসেনাদের সঙ্গে নিয়ে আবার বেরুবাড়িতে যায়। তারা গ্রামের দেড় শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দেয় এবং অনেক নারীকে নির্যাতন করে। গ্রাম থেকে শিশু-যুবক-বৃদ্ধাসহ আড়াইশ’ জনকে বেরুবাড়ি বাজারে ধরে নিয়ে যায়। এদের ১৮ জনকে বেরুবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনে গুলিতে হত্যা করে। অন্যদের ওপর চালায় নির্যাতন।  (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস, দ্বিতীয় খন্ডআবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন সম্পাদিত, পৃ.-১৮৮১৮৯)

 

নাগেশ্বরী থানা স্কুল বধ্যভূমি

মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক স্মৃতি সংরক্ষন প্রতিষ্ঠান শেকড় নাগেশ্বরী ও রঙ্গপুর গবেষণা পরিষদ নাগেশ্বরী কাছ থেকে জানা যায়, নাগেশ্বরী বাজারের পাশে পাকবাহিনী বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে এনে ৩৬ জনকে ৬ জুন হত্যা করে। নাগেশ্বরী উপজেলার হাসনাবাদে ১৬ নভেম্বর পাকবাহিনী ২৯ জনকে হত্যা করে একই স্থানে মাটি চাপা দিয়ে রাখে। এই সব শহীদদের পূর্ণ তথ্য উল্লেখিত সংগঠন নিচের সুসজ্জিতভাবে প্রকাশ করেছে। এসব বধ্যভূমিতে আরও অনেক শহীদ আছেন শোনা যায় তবে এর সংখ্যা ও শহিদের নাম সংগ্রহের এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

অন্যসূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ি ও ভুরুঙ্গামারী থানার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন ধরে এনে নাগেশ্বরী স্কুলের পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হতো। নভেম্বরের কোনো একদিন এখানে অন্তত ৩৬ জনকে হত্যা করে মাটিচাপা দেওয়া হয়। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্রঃ যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা বিচারের অন্বেষণডাঃ এম হাসান, পৃ.-৪১১; একাত্তরের বধ্যভূমি গণকবরসুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-৮১৮২; মুক্তিযুদ্ধ কোষ, দ্বিতীয় খন্ডমুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ.-৩১৩)

 

কোদালকাঠি বধ্যভূমি

২৫ অক্টোবর অর্ধ শতাধিক নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালিকে গুলি করে হত্যা করে পাকবাহিনী। ব্রহ্মপুত্র নদের এক দ্বীপে শংকর মাধবপুর গ্রাম। রাজিবপুর থানার কোদালকাঠি ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। তারামন বিবির জন্মস্থান এই শংকর মাধবপুর গ্রাম। সে স্থানটির দখল এবং পালটা দখল নিয়ে অন্তত দু’বার হয়েছে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এতে মার খেয়েছে পাকিস্তান সেনারা। আর এই প্রতিশোধ নিতে পাকবাহিনী গ্রামবাসীকে হত্যা করে। নিহতরা হলেন,- ১. আব্দুর রহমান, ২. মোকছেদ আলী, ৩. মোহাম্মদ আলী, ৪. খোরশেদ আলী মুন্সী, ৫. আব্দুল বারী, ৬. কুতুব আলী, ৭. মন্তাজ আলী দেওয়ান, ৮. বাদশা দেওয়ান, ৯. আব্দুল গনি, ১০. আয়নাল হক, ১১. ফজল হক, ১২. পাছালী শেখ, ১৩. মোকছেদ আলী, ১৪. মোহাম্মদ রুস্তম, ১৫. জুরান শিকদার, ১৬. নূরুল ইসলাম, ১৭. আজিজুল হক, ১৮. আজিজুর রহমান, ১৯. ময়না শেখ, ২০. হেলাল বেপারী, ২১. নতুব আলী, ২২. জব্বার আলী, ২৩. মেজান শেখ, ২৪. হযরত আলী, ২৫. লাল চান, ২৬. এন্তাজ আলী, ২৭. আবুল হোসেন, ২৮. আয়েন উদ্দিন, ২৯. কছিম উদ্দিন, ৩০. আছমত আলী, ৩১. আব্দুল আজিজ, ৩২. সোবহান বেপারী, ৩৩. বিষু শেখ, ৩৪. আয়োরী বেওয়া, ৩৫.আব্দুল আজিজ (২), ৩৬. ইনুছ শেখ, ৩৭. সিদ্দিক আলী, ৩৮. মজিদ সরকার, ৩৯. সায়েজ আলী, ৪০. তোরান মেলা, ৪১. আব্দুল গফুর, ৪২. সোয়াগি বেওয়া, ৪৩. আরজ উলাহ প্রমুখ।

অন্যসূত্রে, কুড়িগ্রামের রৌমারী থানা সদর থেকে ৭/৮ মাইল দূরে কোদাল্কাঠিতে রয়েছে দুই থেকে তিনশ’ মুতিযোদ্ধার গণকবর। কোদালকাঠিতে সংঘটিত এক যুদ্ধে এঁরা শহীদ হন। এছাড়া ফুলবাড়ি ও ভুরুঙ্গামাড়ি থানায় আরও কয়েকটি গণকবর রয়েছে। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্রঃ যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা বিচারের অন্বেষণডাঃ এম হাসান, পৃ.-৪১১; একাত্তরের বধ্যভূমি গণকবরসুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-৮১)

 

 

 

 

 

কুড়িগ্রাম কাঁঠালবাড়ি বধ্যভূমি

১৯৭১ সালের ৯ জুন কুড়িগ্রাম শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে কাঁঠালবাড়ী বাজার ও আশেপাশের ৬টি গ্রামে পাকবাহিনী তাঁদের এ দেশীয় দালালদের সহযোগীতায় হামলা চালিয়ে হত্যা করে ৩৫ জন সাধারণ বাঙালিকে। সেই সঙ্গে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংস স্তুপে পরিণত করে এই সব গ্রাম।

পাকবাহিনী ওই দিন কাঁঠালবাড়ী বাজারের ৩ দিক থেকে অতর্কিত আক্রমন করে। বাজার ও এর আশেপাশের কয়েকটি গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে। এতে বাজারের শতাধিক দোকান ও ফকিরপাড়া, প্রামাণিকটারী, সন্ন্যাসী, খামার, শিবরাম, সর্দারপাড়া গ্রামের ৫ শতাধিক পরিবারের বাড়ি ঘর পুড়ে যায়। হত্যাযজ্ঞে নিহত হন ফকিরপাড়ার নুহ খন্দকার, প্রামাণিকটারীর ফজল ব্যাপারী, আবুল কাসেম,  ছোরাবউদ্দিন, নুরবক্ত, সর্দারপাড়ার মন্তা, শিবরাম গ্রামের মন্তাজ আলী, আবদুল জলিল, জহুর আলী, খামারের আলিয়ার, মনদ্দি, আজিম, তালুক কালোয়ার বসন্ত কুমার, প্রতাপের হাছিমুদ্দিন, হরিকেশের রজন আলী, ঘোপাটারীর জহুর উদ্দিন, রায়পুরের ঘেচু মামুদ, সর্দার পাড়ার মাদ্রাসার ছাত্র শাহাদাৎ ও টেংরি বেওয়াসহ ৩৫ জন।

 

চিলমারী বালাবাড়ি বধ্যভূমি

১৩ অগাস্ট চিলমারীর বালাবাড়িতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষে ১৭ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। এই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে ১৪ অগাস্ট পাকবাহিনী অসহায় ১৩ জন গ্রামবাসীকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। এঁরা হলেন – ১. দানেশ আলী সরকার, ২. আব্দুর রহমান, ৩. হোসেন আলী, ৪. ছমতুলাহ, ৫. ভোজল মিস্ত্রি, ৬. জহর শেখ, ৭. আবদুল মতিন, ৮. জাদক ফকির, ৯. রুস্তম আলী, ১০. নাদের আলী, ১১. ইদ্রিস আলী, ১২. ছায়েদ আলী, ১৩. আবদুল জলিল

 

কুড়িগ্রাম সদরের বেলগাছা বধ্যভূমি

কুড়িগ্রাম সদরের বেলগাছা ইউনিয়নের ডাক্তারপাড়ায় ১৪ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আক্রমন চালায়। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় গোটা গ্রাম এবং হত্যা করে ৭ জনকে। শহীদরা হলেন – ১. ডা. সফর উদ্দিন আহমদ, ২. আলহাজ্ব সজর উদ্দিন আহমদ, ৩. আবদুল লতিফ, ৪. পোয়াতু মাহমুদ, ৫. বরিজ উদ্দিন, ৬. শাহাবউদ্দিন, ৭. ভোলানাথ।

 

রাজারহাট ঠাঠমারী বধ্যভূমি

সেই ইটভাটাতেই গিয়ে আশ্রয় নেয় পাকসেনারা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে চলে লড়াই। প্রচণ্ড যুদ্ধে কাটে রাত। সে লড়াইয়ে শহীদ হয়েছে ৬ জন মুক্তিসেনা। তাঁদের মধ্যে, ১. আমজাদ হোসেন, ২. জয়নাল আবেদীনের নাম পাওয়া গেছে। এরপর ঠাঠমারী এলাকায় পাকসেনারা ক্যাম্পে এনে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার পর তাঁদের রেল লাইনের পাশে গর্ত করে পুঁতে রাখে। এ স্থানে তৈরি করা হয়েছে স্মৃতি ফলক।

 

নীলুর খামার বধ্যভূমি

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভুরুঙ্গামারী সড়ক থেকে ১ কি.মি. পশ্চিমে নীলুর খামার গ্রামটির অবস্থান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, “দিনটি ছিল একাত্তরের ১৮ নভেম্বর, ২৬ রমজান। এই গ্রাম থেকে ২ কি.মি. দূরে রায়গঞ্জ সেতুর পাশে খান্সেনারা অবস্থান গ্রহণ করে। ঐ দিন এই গ্রামের সদ্য প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন নওাজিশের নেতৃত্ব গ্রামের একটি বাড়িতে দুপুরের খাবার খাচ্ছিল। এ সময় খানসেনারা এই গ্রামের ওপর হামলা চালায়। গ্রামের অনেক ঘরবাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং একটানা গুলি করতে করতে তারা মুক্তিযোদ্ধারাও পালটা গুলি চালায়। কিন্তু তাঁদের গুলির পরিমাণ সীমিত থাকায় এক পর্যায়ে তারা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

 

মুক্তিযোদ্ধাদের ধরতে না পেরে খানসেনারা গ্রামের লোকজনের ওপর এলোপাথারি গুলি করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তারা অনেককে ধরে এই গ্রামের পাশে ঢড়কা বিলের তীরে এক বাঁশঝাড় নিয়ে হত্যা করে। এদিন গ্রামের প্রায় ৭৯ জন শহীদ হন। পরে খান্সেয়ানরা পরে খানসেনারা চলে গেলে গ্রামবাসী এই শহীদের কয়েকটি কবরে মাটিচাপা দেয়। সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়েও অনেকে আবার বেঁচে যায়। (নাগেশ্বরীশেকড়সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লিটন চৌধুরী প্রত্যক্ষদ্ররশীদের বিবরণ থেকে সংকলিত)

 

আহসান হাবীব নীলু

(নাগেশ্বরীশেকড়সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লিটন চৌধুরী প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে অধিকাংশ তথ্য সংগৃহীত)

 

কুষ্টিয়া জেলা

 

কুষ্টিয়া পুলিশলাইন ছিল পাকসেনাদের ঘাঁটি। বিহারি ও রাজাকারের সহয়তায় সন্দেহভাজন বাঙালিদের এখানে ধরে আনা হতো। চলতো অকথ্য নির্যাতন। উপরে পা ঝুলিয়ে পেটানো হতো, হাত পায়ের আঙুলে আলপিন ঢুকিয়ে দেওয়া হতো। যাঁদেরকে হত্যা করত তাঁদের হস্তান্তর করা হতো রাজাকার ও বিহারিদের কাছে।

 

পুলিশলাইন বধ্যভূমি

কুষ্টিয়া পুলিশলাইন ছিল পাকসেনাদের ঘাঁটি। বিহারি ও রাজাকারের সহয়তায় সন্দেহভাজন বাঙালিদের এখানে ধরে আনা হতো। চলতো অকথ্য নির্যাতন। উপরে পা ঝুলিয়ে পেটানো হতো, হাত পায়ের আঙুলে আলপিন ঢুকিয়ে দেওয়া হতো। যাঁদেরকে হত্যা করত তাঁদের হস্তান্তর করা হতো রাজাকার ও বিহারিদের কাছে। হতভাগ্য এই মানুষগুলোকে পার্শবর্তী রেললাইনের নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে গুলি চালিয়ে কিংবা জবাই করে মারা হতো তাঁদের। পুলিশ লাইনের বন্দীদশা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয় অধ্যাপক দুর্গাদাস সাহাকে। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্রঃ একাত্তরের বধ্যভূমি গণকবরসুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-১০৯, ৪০০; যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা বিচারের  অন্বেষণডাঃ এম হাসান, পৃ.-৩৯৯; মুক্তিযুদ্ধ কোষ, দ্বিতীয় খন্ডমুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ.-৩৬০; দৈনিক সংবাদ, ২১ মে ১৯৯৩)

 

রক্সি বাজারের গলি বধ্যভূমি

কুষ্টিয়ায় রক্সি সিনেমা হল ছিল শান্তি কমিটি ও বিহারি রাজাকারদের প্রধান আস্তানা। এখানেই তারা শহরের হয়া-তালিকা প্রণয়ন এবং কার্যকর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতো। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্রঃ একাত্তরের বধ্যভূমি গণকবরসুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-১০৯, ৪০০; যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা বিচারের অন্বেষণডাঃ এম হাসান, পৃ.-৩৯৯; মুক্তিযুদ্ধ কোষ, চতুর্থ খন্ডমুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ.-২৩; দৈনিক সংবাদ, ২১ মে ১৯৯৩)

 

গড়াই নদীর চর বধ্যভূমি

বিহারি রাজাকাররা কুষ্টিয়ার বিভিন্ন ঘাঁটি থেকে হতভাগ্য বন্দিদের ধরে নিয়ে গড়াই নদীর চলে হত্যা করে লাশ সেখানেই পুঁতে ফেলতো। আবার কখনো কখনো নদীর জলে ভাসিয়ে দিতো কোন কোন লাশ। এখানেই কুষ্টিয়া পৌরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান আবুল কাছেমকে হত্যা করে হয়। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্রঃ একাত্তরের বধ্যভূমি গণকবরসুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-১০৯, ৪০০; যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা বিচারের অন্বেষণডাঃ এম হাসান, পৃ.-৩৯৯; মুক্তিযুদ্ধ কোষ, চতুর্থ খন্ডমুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ.-২৩; দৈনিক সংবাদ, ২১ মে ১৯৯৩)

 

 

 

 

হাউজিং এস্টেট বধ্যভূমি

কুষ্টিয়া শহরতলীর বিহারি অধ্যুষিত হাউজিং এস্টেট হলো একটি বধ্যভূমি। নির্মম গণহত্যার নীরব সাক্ষী এই হাউজিং এলাকা। শহর থেকে বাঙালিদের ধরে এনে এখানে হত্যা করা হতো। হত্যাকুঠি হিসেবে ব্যবহারিত একটু ভগ্নজীর্ন ঘর এখনো হাউজিং – এত দক্ষিন পুর্ব –পাশে দাঁড়িয়ে আছে। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্রঃ একাত্তরের বধ্যভূমি গণকবরসুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-১০৯, ৪০১; যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা বিচারের অন্বেষণডাঃ এম হাসান, পৃ.-৩৯৯৪০০; মুক্তিযুদ্ধ কোষ, চতুর্থ খন্ডমুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ.-২৭৩২৭৪; দৈনিক সংবাদ, ২১ মে ১৯৯৩)

 

কুষ্টিয়া হাউজিং কলোনি বধ্যভূমি

কুষ্টিয়া শহরের আরেকটি বধ্যভূমি হল হাউজিং কলোনি। এটি হাউজিং এস্টেটেরই একটি অংশ। এখানে পাকবাহিনীর কিশোরী, তরুনীসহ সব বয়সের মেয়েদের আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন চালাতো। তাঁদের এই অত্যাচারের হাত থেকে বিধবা, পঙ্গু মেয়েরাও বাদ পড়েনি। এমনকি চার দিনের প্রসূতিও তাঁদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। এখানে অনেক পুরুষ-মহিলাকে পাকবাহিনী ও তার দোসররা হত্যা করেছে। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্রঃ একাত্তরের বধ্যভূমি গণকবরসুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-১০৯, ১১০; যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা বিচারের অন্বেষণডাঃ এম হাসান, পৃ.-৪০০)

 

মহাশ্মশান বধ্যভূমি

একাত্তরে পাক হানাদার বাহিনী কুষ্টিয়ার মহাশ্মশান এলাকাকে বধ্যভূমি হিসেবে ব্যবহার করেছিল। এখানে তারা বহু বাঙালিকে হত্যা করেছে। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্রঃ একাত্তরের বধ্যভূমি গণকবরসুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-১০৯, ৪০১; যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা বিচারের অন্বেষণডাঃ এম হাসান, পৃ.-৪০০; মুক্তিযুদ্ধ কোষ, চতুর্থ খন্ডমুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ.-২৭৪)

 

স্টেশন রোড মালগুদাম বধ্যভূমি

কুষ্টিয়ার স্টেশন রোডের এক নং মালগুদাম ছিল একটি বধ্যভূমি। এখানে পাকবাহিনী ও তাঁদের দোসর বিহারি রাজাকাররা অনেক বাঙালিকে নির্মনভাবে হত্যা করে। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্রঃ একাত্তরের বধ্যভূমি গণকবরসুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-১০৯, ৪০১; যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা বিচারের অন্বেষণডাঃ এম হাসান, পৃ.-৪০০; মুক্তিযুদ্ধ কোষ, চতুর্থ খন্ডমুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ.-২৭৪; দৈনিক সংবাদ, ২১ মে ১৯৯৩)

 

জুয়েল এলুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি বধ্যভূমি

কুষ্টিয়ার জুয়েল এলুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি  বধ্যভূমিতে এখনও কালের নীরব সাক্ষী হয়ে রয়েছে একটি তেঁতুল গাছ। ইংরেজি ণ বর্নের মত এর দুটো বিস্তারিত শাখার মাঝখানে মাথা চেপে রেখে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হত বাঙালিদের। মিল পাড়ার কোহিনূর বেকারির মালিককে সপরিবার এভাবে নৃশংসভাবে এখানে হত্যা করা হয়। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্রঃ একাত্তরের বধ্যভূমি গণকবরসুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-১০৯, ৪০১; যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা বিচারের অন্বেষণডাঃ এম হাসান, পৃ.-৪০০; মুক্তিযুদ্ধ কোষ, চতুর্থ খন্ডমুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ.-২৭৪)

 

খাগড়াছড়ি জেলা

খাগড়াছড়ি মহালছড়ি উপজেলার তেলাং তাঙ্গা এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা বাড়ী থেকে ধরে এনে চিত্ত রঞ্জন চাকমা (কার্বারী), গৌরাঙ্গ দেওয়ান, সব্যসাচি চাকমা এই তিঞ্জঙ্কে গুলি করে হত্যা করে। পরে তাঁদের পাহাড়ি এলাকায় গণকবর দেয় পাক সেনারা।

 

 

 

মহালছড়ি উপজেলার তেলাং তাঙ্গা বধ্যভূমি

খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার তেলাং তাঙ্গা এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা বাড়ি থেকে ধরে এনে চিত্ত রঞ্জন চাকমা (কার্বারী), গৌরাঙ্গ দেওয়ান, সব্যসাচি চাকমা এই তিঞ্জঙ্কে গুলি করে হত্যা করে। পরে তাঁদের পাহাড়ি এলাকায় গণকবর দেয় পাক সেনারা।

খাগড়াছড়িতে বধ্যভূমি বা গণকবরকে কোন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজীর সাবেক অধ্যক্ষ ড. সুধিন চাকমা।

ড. সুধিন চাকমা বলেন, ১৯৭১ সালের ১৩ মে তার বাবা চিত্ত্রঞ্জনসহ আরও দুই জনকে পাকিস্তানি সৈনিকরা নৃশংসভাবে হত্যা করে। তার আক্ষেপ গণকবরটিকে বধ্যভূমি করার উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন।

 

খুলনা জেলা

খুলনা শহরের কেন্দ্রস্থলে রেল স্টেশন ও রেল লাইনের বিস্তির্ন এলাকা জুড়ে করা হয়েছে বাঙালি নিধন। এপ্রিল-মে মাসে জল্লাদ সৈনরা খুলনা রেল স্টেশন এলাকাতে বহু বাঙালিকে হত্যা করেছে। যাদের অনেকেই জেলার বাইরে থেকে আসা ট্রেন যাত্রী। সবকিছু লুটপাট করে এদের হত্যা করা হতো।

 

রেলস্টেশন বধ্যভূমি

খুলনা শহরের কেন্দ্রস্থলে রেল স্টেশন ও রেল লাইনের বিস্তির্ন এলাকা জুড়ে করা হয়েছে বাঙালি নিধন। এপ্রিল-মে মাসে জল্লাদ সৈনরা খুলনা রেল স্টেশন এলাকাতে বহু বাঙালিকে হত্যা করেছে। যাদের অনেকেই জেলার বাইরে থেকে আসা ট্রেন যাত্রী। সবকিছু লুটপাট করে এদের হত্যা করা হতো। তারপর লাশগুলোর পেট চিরে নদীতে ফেলে দেওয়া হতো যেন সেগুল জলের গভীরে তলিয়ে যায়। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্রঃ একাত্তরের বধ্যভূমি গণকবরসুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-৮৮; বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র, অষ্টম খন্ডহাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত, পৃ. –৪৮০; দৈনিক বাংলা, ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২)

 

রেল কলোনি সংলগ্ম ডবা বধ্যভুমি

খুলনার রেল কলোনি এলাকাতে পাকসেনাদের সহযোগী একদম অবাঙালির প্রাধান্য ছিল। ঐ সময়ে রেল কলোনি এলাকাতে দিনে বা রাতে যখনই কোন বাঙালি গিয়েছে, সে আর ফেরেছি তাঁদের হত্যা করে পুঁতে রাখা হতো। ঐসব কলোনিতে বসবাসকারী অনেক বাঙালি রেল কর্মচারীও এই হত্যার শিকার হয়েছে। এখান থেকেই খুলনা থানার তৎকালীন দারোগা আবুল কাশেমের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এলাকার আশিয়ানি হোটেলের সামনে বিরাট একটা ডোবা আছে। সে ডোবায় বহু বাঙ্গালির লাশও নিক্ষেপ্ত করা হয়েছে। এখানে বস্তার বন্দি লাশও ভাস্তে দেখা গেছে। একবার এক্ট বস্তা খুলে শার্ট-প্যান্ট পরা সুদর্শন এক তরুনের লাশ পাওয়া যায়। রেল কলোনি থেকে খুলনা থানার দারোগা আবুল কাশেমের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্রঃ একাত্তরের বধ্যভূমি গণকবরসুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-৩০২; যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা বিচারের অন্বেষণডাঃ এম হাসান, পৃ.-৩৯৪; মুক্তিযুদ্ধ কোষ, চতুর্থ খন্ডমুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ.-৫৯; বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র, অষ্টম খন্ডহাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত, পৃ. –৪৮০; দৈনিক সংবাদ, ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২)

 

ফেরিঘাট বধ্যভূমি

খুলনা ফেরিঘাট এলাকায় ছিল বধ্যভূমি। এই ফেরিঘাট এলাকায় পাকসেনারা লঞ্চ-স্টিমারের যাত্রীদের ধরে এনে লুটপাট করে হত্যা করত তাঁদের। এরপর লাশগুলো নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হতো। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্রঃ একাত্তরের বধ্যভূমি গণকবরসুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-৮৮; বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র, অষ্টম খন্ডহাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত, পৃ. –৪৮০; দৈনিক সংবাদ, ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২)

 

শিকারপাড়া বধ্যভূমি

খুলনার শিকারপাড়া এলাকায় রয়েছে বধ্যভূমি। যুদ্ধের নয়মাস পাক হানাদার বাহিনী এখানে বহু মানুষের ওপর অত্যাচার চালিয়ে হত্যা করেছে। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্রঃ একাত্তরের বধ্যভূমি গণকবরসুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-৮৮; দৈনিক বাংলা, ২৯ জানুয়ারি ১৯৭২)

 

গল্লামারি বধ্যভূমি

খুলনা সদরের একটি বধ্যভূমি গল্লামারিতে। খুলনা শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে দেড়মাইল দুপরে গল্লামারির অবস্থান। এখানে তারা অসংখ্য বাঙালিকে হত্যা করে। ১৯৭২ সালে “দৈনিক বাংলা” –এর একটি প্রতিবেদনে উল্লখ করা হয়।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!