You dont have javascript enabled! Please enable it!

বকচরা শিবিরে শিশুমৃত্যু

 গৌরকিশাের ঘােষ গাইঘাটা থানার বকচরা শিবিরে শিশু মড়ক শুরু হয়েছে। ভেদবমি হচ্ছে। ডাক্তার নেই, চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা নেই। আই এম এ, রেডক্রশ বা দেশী-বিদেশী কোনও সাহায্য বা সেবা প্রতিষ্ঠানই ধারে কাছে নেই। অতএব চিকিৎসার অভাবে ভেদবমিতে আক্রান্ত শিশুর দল, শরীরে জলাভাব ঘটার এক সময় নেতিয়ে পড়ছে। তারপর একে একে মরছে।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার সময়, যশাের রােডের ধারেই বকচরা হাটতলায় পৌঁছে দেখি, অল্পবয়সি এক হতভাগিনী মা রুগ্ন মুমুর্মূ এক সন্তানকে বুকে চেপে ধরে হাপুস নয়নে কাঁদছেন। শুনলাম, তার আরেকটি সন্তান সেদিন সকালের দিকেই মারা গিয়েছে। আমরা শিবিরে থাকতে থাকতেই আরও দুটি শিশু মারা গেল বলে খবর পেলাম।পাঁচদিন আগে থেকে এই শিবিরে ভেদবমির আক্রমণ শুরু হয়। রােগের নাম নাকি গ্যাসট্রো কোলাইটিস। লক্ষণ অনবরত ভেদবমি হয়। শরীরের জল শুকিয়ে যায়। তারপর রােগী মরে। এ পর্যন্ত মােট আটটি ছেলে এই রােগে মরেছে। সকলেরই বয়েস দশের নিচে। এ সংখ্যা নিতান্তই আন্দাজী। কারণ মৃত্যুর কোনও খতিয়ান রাখা হচ্ছে না। শুধু যে শিশুরাই এই রােগে আক্রান্ত তা নয়, বড়দেরও এই রােগ ধরছে, তারাও মরছে। ওই শিবিরের অনিল মন্ডল নিস্তেজ গলায় বলল, আমার মা, বউ মেয়ে তিনজনই মারা গিয়েছে বনগায়ের হাসপাতালে। বাবা ভাইও সেখানে। বেঁচে আছে কিনা জানি না। আমিই একমাত্র সেরে উঠেছি। বকচরার এই আশ্রয় শিবির ১১ মে চালু হয়। বকচরা গ্রাম সেবা সমিতি এই শিবিরের তত্ত্বাবধান করছেন। ১২ তারিখ থেকে সরকার কঁচা রেশন সরবরাহ করা শুরু করেছেন। শিবির পরিচালকদের একজন বললেন, যশাের এবং খুলনা জেলা থেকে আগত এক হাজার সাতটি পরিবার এ পর্যন্ত এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। মােট লােক সংখ্যা ৫৫৫৮। এতগুলাে লােক পড়ে আছে, মাথার উপর কোনও আচ্ছাদন নেই। এ ডি এম এসে দেখে গিয়েছেন। তাঁবুর ব্যবস্থা করবেন, সে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।

অবিলম্বে এই কাজগুলাে সরকার বা বেসরকারি সাহায্য প্রতিষ্ঠানগুলির করা দরকার। যথা : 

(১) মুমূর্ষ রােগীদের বাঁচাবার জন্য বকচরার এখনই মেডিকেল টিম প্রেরণ : 

(২) মৃতুদেহগুলি সকারের এমন ব্যবস্থা করা যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়।

 (৩) রােগীদের মলমূত্র বমি যাতে অন্যের বিপদ না ঘটায় সে ব্যবস্থা করা।

 (৪) তাবুর ব্যবস্থা করা।

 (৫) কাপড়ের অভাবে শিবিরের আশ্রয়প্রার্থী মেয়েদের লজ্জা নিবারণ হচ্ছে না, কাপড় সরবরাহ করা।

 (৬) জ্বালানির অভাব দূর করা। জলের জন্য দুটো টিউবওয়েল বসান হয়েছে। আরও গােটা দুই দরকার।

২৪ জুলাই, ‘৭১

Reference: ২৪ জুলাই ১৯৭১, দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!